Ads

দাঁতের মাড়িতে ব্যথা হলে করণীয়

দাঁতের মাড়িতে ব্যথা একটি সাধারণ সমস্যা যা অনেকের জীবনে এক বা একাধিকবার ঘটে থাকে। দাঁতের মাড়িতে ব্যথা মূলত বিভিন্ন কারণে হতে পারে। এটি অল্প সময়েরএটি অল্প সময়ের জন্য হতে পারে, আবার দীর্ঘ সময়ের জন্যও টিকে থাকতে পারে। এই ব্যথা কখনও কখনও খুব তীব্র হতে পারে এবং দৈনন্দিন জীবনে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। দাঁতের মাড়িতে ব্যথা হলে করণীয় কী কী তা জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দাঁতের মাড়িতে ব্যথা হলে করণীয় নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:


দাঁতের মাড়িতে ব্যথা হলে লবণ পানি দিয়ে গার্গল করুন, নরম ব্রাশ ব্যবহার করে সঠিকভাবে দাঁত পরিষ্কার রাখুন এবং প্রয়োজন হলে অ্যান্টিসেপটিক মাউথওয়াশ ব্যবহার করুন। প্রচুর পানি পান করে শরীরকে হাইড্রেটেড রাখুন এবং মিষ্টি ও স্টার্চি খাবার কম খান। ব্যথা তীব্র হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।


দাঁতের মাড়িতে ব্যথার কারণসমূহ

দাঁতের মাড়িতে ব্যথার কারণ অনেক হতে পারে। এর মধ্যে প্রধান কারণগুলো হলো:

জিনজিভাইটিস :দাঁতের মাড়িতে প্রদাহ সৃষ্টি করে এমন একটি রোগ। এতে মাড়ি লাল হয়ে যায়, ফোলা থাকে এবং ব্যথা হতে পারে।

পিরিওডন্টাইটিস: যদি জিনজিভাইটিস যথাযথভাবে চিকিৎসা না করা হয়, তবে এটি পিরিওডন্টাইটিসে পরিণত হতে পারে। এতে মাড়ি এবং হাড় ক্ষয় হতে শুরু করে।

দাঁতের প্লাক: দাঁতের উপর জমে থাকা খাদ্যকণা এবং ব্যাকটেরিয়া মাড়িতে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে।

দাঁতের ক্ষয়: দাঁতের ক্ষয়ের কারণে দাঁতের স্নায়ুতে সংক্রমণ হতে পারে, যা মাড়িতেও ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।

মাড়ির আঘাত: দুর্ঘটনা বা অন্য কোনো আঘাতের ফলে মাড়িতে ব্যথা হতে পারে।

দাঁতের ব্রাশিং সমস্যা: অতিরিক্ত জোরে ব্রাশ করা বা ভুল পদ্ধতিতে ব্রাশ করার ফলে মাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

হরমোনাল পরিবর্তন: গর্ভাবস্থা, ঋতুস্রাব বা মেনোপজের সময় হরমোনাল পরিবর্তনের ফলে মাড়িতে ব্যথা হতে পারে।

অপর্যাপ্ত মুখের যত্ন: দাঁত এবং মাড়ির যত্ন না নিলে মাড়িতে ব্যথা হতে পারে।


দাঁতের মাড়িতে ব্যথা হলে করণীয়

দাঁতের মাড়িতে ব্যথা হলে নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলি অনুসরণ করা যেতে পারে:

 1. সঠিকভাবে মুখ পরিষ্কার করা

প্রথম এবং প্রধান কাজ হচ্ছে সঠিকভাবে মুখ পরিষ্কার করা। নরম ব্রাশ ব্যবহার করে প্রতিদিন দুইবার দাঁত ব্রাশ করা উচিত। এছাড়া, ব্রাশ করার পর মাউথওয়াশ ব্যবহার করতে পারেন যা মুখের ব্যাকটেরিয়া দূর করতে সাহায্য করে।

2. লবণ পানি দিয়ে গার্গল
গরম পানিতে এক চামচ লবণ মিশিয়ে গার্গল করুন। লবণ পানি মাড়ির প্রদাহ কমাতে এবং ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে সহায়ক।

3. বরফ প্রয়োগ
মাড়িতে বরফ প্রয়োগ করা ব্যথা কমাতে সহায়ক হতে পারে। বরফ থেরাপি মাড়ির প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং ব্যথা প্রশমিত করে।

4. হাইড্রেশন
শরীরের পানিশূন্যতা থাকলে মাড়িতে ব্যথা বাড়তে পারে। প্রচুর পানি পান করুন এবং শরীরকে হাইড্রেটেড রাখুন।

5. অ্যান্টিসেপটিক মাউথওয়াশ
মাড়ির প্রদাহ এবং ব্যাকটেরিয়া দূর করতে অ্যান্টিসেপটিক মাউথওয়াশ ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি মুখের জীবাণু দূর করতে এবং মাড়ির স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সাহায্য করে।

6. খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন
খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে। মিষ্টি এবং স্টার্চি খাবার কম খাওয়া উচিত। এছাড়া, ফল এবং সবজির পরিমাণ বাড়াতে হবে যা মাড়ির স্বাস্থ্য ভাল রাখে।

7. ওষুধ সেবন
মাড়ির ব্যথা খুব বেশি হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী পেইনকিলার বা অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করতে পারেন। তবে, ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত ওষুধ সেবন করা উচিত নয়।

8. পর্যাপ্ত বিশ্রাম
দেহের পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্রাম শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং মাড়ির প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।

দাঁতের মাড়ির যত্নে বাড়তি কিছু টিপস

  1. মুখের স্বাস্থ্য বজায় রাখা: প্রতিদিন নিয়মিতভাবে মুখ পরিষ্কার রাখা। দিনে অন্তত দুইবার দাঁত ব্রাশ করা এবং ফ্লসিং করা।
  2. সুষম খাদ্যাভ্যা: ভিটামিন সি এবং ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা।
  3. বেশি চিনি খাওয়া থেকে বিরত থাকা: চিনি দাঁতের মাড়িতে ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধিতে সহায়ক, তাই চিনি কম খাওয়া উচিত।
  4. প্রতিনিয়ত ডেন্টিস্টের কাছে যাওয়া: প্রতিনিয়ত ডেন্টিস্টের কাছে গিয়ে দাঁত ও মাড়ির পরীক্ষা করানো উচিত।
  5. ধূমপান ত্যাগ করা: ধূমপান মাড়ির রোগের প্রধান কারণ। ধূমপান ত্যাগ করলে মাড়ির স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়।


কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন

মাড়ির ব্যথা যদি বেশ কয়েকদিন ধরে থাকে এবং উপরের পদ্ধতিগুলি অনুসরণ করার পরও উন্নতি না হয়, তাহলে ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত। নিচের পরিস্থিতিতে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি:

  1. ব্যথা তীব্র হলে: যদি ব্যথা তীব্র এবং স্থায়ী হয়।
  2. মাড়ি ফুলে গেলে: মাড়ি ফুলে গেলে এবং লাল হয়ে গেলে।
  3. রক্তক্ষরণ হলে: দাঁত ব্রাশ করার সময় বা অন্য সময়ে মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ হলে।
  4. মাড়িতে পুঁজ জমলে: মাড়িতে পুঁজ জমলে এবং তীব্র ব্যথা হলে।
  5. দাঁত নড়বড়ে হলে: দাঁত নড়বড়ে হয়ে গেলে।

মাড়ির ব্যথা একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এটি উপেক্ষা করা উচিত নয়। সঠিক যত্ন এবং চিকিৎসা গ্রহণ করলে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। তাই মাড়ির ব্যথা হলে উপরের পদ্ধতিগুলি অনুসরণ করে এবং প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে মাড়ির স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া উচিত।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
কমেন্ট করতে এখানে ক্লিক করুন

এ.আর.আরিফিন নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১