হযরত মুসা আঃ এর জীবনী
হযরত মুসা (আঃ) ইসলামের অন্যতম প্রধান নবী। তিনি ইসলাম, খ্রিস্টান এবং ইহুদি ধর্মে অত্যন্ত সম্মানিত। তার জীবনের বিভিন্ন ঘটনা কোরআন, বাইবেল ও তাওরাতে বর্ণিত হয়েছে। তার কাহিনী থেকে মুসলমানরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা গ্রহণ করে।
শৈশব ও প্রতিপালন
হযরত মুসা (আঃ) এর জন্ম মিশরে, যেখানে তখনকার সময়ে ফেরাউনের শাসন ছিল। ফেরাউন বনী ইসরাইলদের উপর অত্যাচার চালাত এবং এক সময় তিনি আদেশ দেন যে, বনী ইসরাইলের সকল পুরুষ সন্তানকে হত্যা করা হবে। তখন মুসার (আঃ) মা আল্লাহর নির্দেশে তাকে একটি ছোট বাক্সে রেখে নীলে ভাসিয়ে দেন। ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া তাকে পেয়ে পালক পুত্র হিসেবে গ্রহণ করেন।
নবুওয়ত প্রাপ্তি
যুবক মুসা (আঃ) একদিন একজন মিশরীয়কে বনী ইসরাইলের এক ব্যক্তিকে অত্যাচার করতে দেখে তাকে প্রতিরোধ করেন এবং ভুলবশত তাকে হত্যা করে ফেলেন। এ ঘটনার পর মুসা (আঃ) মিশর থেকে পালিয়ে মাদইয়ান শহরে চলে যান। সেখানে তিনি শুআইব (আঃ) এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং তার কন্যা সাফুরাকে বিয়ে করেন। মাদইয়ানে বেশ কিছু বছর কাটানোর পর, আল্লাহ তাকে নবুওয়ত প্রদান করেন।
তূর পর্বতে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ
মুসা (আঃ) একদিন তূর পর্বতে গিয়ে আল্লাহর সাথে কথা বলেন। সেখানে আল্লাহ তাকে ফেরাউনের কাছে পাঠানোর নির্দেশ দেন যাতে তিনি বনী ইসরাইলকে মুক্ত করতে পারেন। আল্লাহ তাকে আশ্বস্ত করেন যে তিনি তার ভাই হারুনকে (আঃ) সহযোগী করবেন।
ফেরাউনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম
মুসা (আঃ) আল্লাহর নির্দেশে মিশরে ফিরে আসেন এবং ফেরাউনকে বনী ইসরাইলদের মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানান। ফেরাউন তা অস্বীকার করেন এবং আল্লাহর নির্দেশে মুসা (আঃ) বিভিন্ন অলৌকিক নিদর্শন প্রদর্শন করেন। কিন্তু ফেরাউন ও তার অনুসারীরা তা অবজ্ঞা করে। ফলে আল্লাহ তাদের উপর বিভিন্ন আযাব নাজিল করেন যেমন রক্ত, ব্যাঙ, উকুন, পঙ্গপাল, এবং ঘোর অন্ধকার। অবশেষে ফেরাউন বনী ইসরাইলদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।
লোহিত সাগর পাড়ি
বনী ইসরাইলরা মুসার (আঃ) নেতৃত্বে মিশর ত্যাগ করেন। ফেরাউন তাদের পশ্চাদ্ধাবন করে এবং লোহিত সাগরের তীরে এসে উপস্থিত হয়। আল্লাহর নির্দেশে মুসা (আঃ) লাঠি দিয়ে সমুদ্রকে আঘাত করলে তা দ্বিখণ্ডিত হয় এবং বনী ইসরাইলরা নিরাপদে পার হয়। ফেরাউন ও তার বাহিনী তাদের অনুসরণ করলে সমুদ্র পুনরায় একত্রিত হয় এবং তারা সকলেই ডুবে যায়।
বনী ইসরাইলের প্রতিকূলতা
বনী ইসরাইলদের পরবর্তী জীবনও নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়। তারা বিভিন্ন সময় আল্লাহর নির্দেশনা মানতে অস্বীকৃতি জানায়। এক সময় আল্লাহ তাদেরকে ৪০ বছর মরুভূমিতে ঘুরে বেড়ানোর শাস্তি দেন। মুসা (আঃ) তাদেরকে সবসময় সঠিক পথে চলার উপদেশ দেন এবং তাদের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেন।
তাওরাত প্রাপ্তি
মুসা (আঃ) তূর পর্বতে গিয়ে আল্লাহর কাছ থেকে তাওরাত লাভ করেন। এই তাওরাত ছিল বনী ইসরাইলের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত ধর্মগ্রন্থ। এর মাধ্যমে তারা তাদের জীবন পরিচালনার নির্দেশনা পায়।
জীবনের অন্তিম পর্ব
হযরত মুসা (আঃ) আল্লাহর প্রিয় নবী হিসেবে তার জীবন অতিবাহিত করেন। তার মৃত্যু সম্পর্কে বিশদ বর্ণনা না থাকলেও ইসলামের বিভিন্ন ঐতিহ্য ও গ্রন্থে বলা হয়েছে যে তিনি ১২০ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। তার মৃত্যু বনী ইসরাইলদের জন্য একটি বড় শোক ছিল।
হযরত মুসা (আঃ) এর জীবনী থেকে আমরা বহু শিক্ষা লাভ করি। তিনি ধৈর্য, ন্যায়পরায়ণতা, আল্লাহর উপর অটল বিশ্বাস এবং সত্যের পথে অবিচল থাকার এক উজ্জ্বল উদাহরণ। তার জীবনকাহিনী মুসলমানদের জন্য এক অনুপ্রেরণা এবং তাদের আখলাক ও ঈমান মজবুত করার এক মহা শিক্ষা।
এ.আর.আরিফিন নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url